রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনা নতুন নয়। প্রায়ই এমন সংঘর্ষ ঘটে থাকে। এবারে দু’দিন ধরে সংঘর্ষে এক তরুণ মারা গেছে। এতে আহত হয়েছেন শতাধিক ছাত্র, ব্যবসায়ী, পথচারী ও সাংবাদিক।
পুরো নিউমার্কেট এলাকা রাজধানীর ব্যবসাবাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র। ঢাকার এ অংশটি সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বিপণিবিতানসমৃদ্ধ এলাকা। ঢাকার প্রথম আধুনিক বিপণিবিতান নিউমার্কেট ছাড়াও এখানে রয়েছে অনেকগুলো বিপণিবিতান। এখানে সারা বছরই ক্রেতাদের ভিড় লেগে থাকে। সবচেয়ে বেশি জনসমাগম হয় ঈদের মতো বিভিন্ন উৎসব সামনে রেখে। শুধু মার্কেট বা বিপণিকেন্দ্রই নয় এটি; এখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজসহ দেশের বেশ কয়েকটি বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সেগুলোর ছাত্রাবাস রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসায়ীদের সাথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মাঝে মধ্যে নানা কারণে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। বিরোধ-সংঘর্ষের ঘটনাও নতুন নয়। এর আগেও বহুবার এ ধরনের সংঘর্ষে অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছে।
সংঘর্ষের কারণও পুলিশ প্রশাসনসহ কারো অজানা নয়। ব্যবসায়ীরা এবারো বলেছেন, হোটেলে খেয়ে দাম না দিয়েই চলে যায় ঢাকা কলেজের কিছু ছাত্র। বলেছেন, ঢাকা কলেজের একশ্রেণীর ছাত্রের নিয়মিত চাঁদাবাজির শিকার তারা। চাঁদা দিতে দিতে তারা অতিষ্ঠ। চাঁদাবাজি কারা করেন ভেঙে বলার দরকার আছে বলে মনে হয় না। এবারের সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত ঢাকা কলেজের ছাত্ররা সংঘর্ষের সময় ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে স্লেøাগান দিয়েছেন। বলেছেন, ঢাকা কলেজকে সবসময়ই অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি থাকলে এটা হতে পারত না। এ বক্তব্যের সার-সত্য কী? অর্থ হলো- চাঁদার অর্থ সবাই পাচ্ছে না। এসব না বোঝার কোনো কারণ নেই। কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং পুলিশ সবাই এসব অদৃশ্য সত্য জানে। বছরে বিপুল টাকার চাঁদার ভাগ প্রশাসন ও রাজনীতিক অনেকের ঘরেও পৌঁছায় এমন অভিযোগ বহু পুরনো।
আবার ব্যবসায়ীরাও ধোয়া তুলসীপাতা নন। বিশেষ করে নিউমার্কেটের অনেক ব্যবসায়ী আছেন যারা এমনকি সাধারণ ক্রেতাদের সাথে যখন তখন দুর্ব্যবহার করেন। ছোটখাটো কথা বা দরকষাকষি নিয়েও অনেক ক্রেতাকে সেখানে নিগ্রহের শিকার হতে হয়। এসব ঘটনা কারোরই অজানা নয়। তাই ব্যবসায়ীদের সাথে দ্বন্দ্বের অবসান ঘটা আপাতদৃষ্টে সম্ভব বলে মনে হয় না।
বহুবার সংঘর্ষ হলেও তার স্থায়ী সমাধান না হওয়ার এগুলোই কারণ। প্রশাসন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে ওই এলাকায় চাঁদাবাজি বন্ধ করতে পারবে না রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া। কিন্তু সে রকম সিদ্ধান্ত আসবে তা আশা করা বর্তমান বাস্তবতায় দুরাশা। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রকদেরও লেঠেলের দরকার হয়। ক্ষমতায় যেতে, ক্ষমতা ধরে রাখতে পেটুয়া, হাতুড়ি, হেলমেট ইত্যাদি বাহিনী পুষতে হয়। নানা রূপের বাহিনী লালন-পোষণের সহজতম উপায় চাঁদাবাজির সুযোগ দেয়া। প্রত্যেকেই যার যার নগদ লাভ নিয়ে ব্যতিব্যস্ত। সুতরাং আশাবাদী হওয়ার কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না।
দুষ্টচক্র সব সময়ই সমাজে ছিল-আছে-থাকবে। এদের নিয়েই আমাদের পথ চলতে হবে। মাঝে মধ্যে দু’চারজন হতভাগার লাশ পড়বে, নিরীহ মায়ের কোল খালি হবে, হাতের মেহেদি মুছে যাবে কোনো নববধূর, কোনো সন্তান এতিম হবে। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের এটাই যেন ভাগ্যলিপি। যতক্ষণ পর্যন্ত না নিষ্ঠা ও আদর্শবান রাজনৈতিক নেতৃত্ব পুরো নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় আসে। সাধারণ মানুষ এসব বিষয়ে সচেতন হবে এটাই আজকের দিনে একমাত্র প্রত্যাশা।
আপনার মতামত লিখুন :