চট্টগ্রামে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে হোয়াইটওয়াশ এড়াতে মাঠে নেমে দুর্দান্ত বোলিং করেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। টাইগার পেসার শরিফুল ইসলামের ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ৪৫.২ ওভারে ১২৬ রানে অলআউট হয়ে গেছে আফগানিস্তান। এটি বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানদের সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর। এর আগে ২০১৬ সালে মিরপুরে ১৩৮ রানে অলআউট হয়েছিল সফরকারীরা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান ৪৫.২ ওভারে ১২৬/১০
(আজমতউল্লাহ ওমরজাই ৫৬, হাসমতউল্লাহ শহীদি ২২, মুজিব উর রহমান ১১ ও নাজিবুল্লাহ জাদরান ১০)
(শরিফুল ৪/২১, তাসকিন ২/২৩, তাইজুল ২/৩৩, মেহেদী ১/৩৫, সাকিব ১/১৩)
মুজিবকে ফেরালেন মিরাজ
আজমতউল্লাহ ওমরজাই ও মুজিব উর রহমানের জুটি ছিল আফগানিস্তানের ইনিংসের সর্বোচ্চ। নবম উইকেটে ৩৬ রানের জুটি গড়ে আফগানদের দ্রুত অলআউট হওয়া থেকে রক্ষা করেন তারা। তবে সেটা ভেঙে দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ডিপ মিডউইকেটে মুজিব ১১ রানে আফিফ হোসেনের ক্যাচ হন।
আফগানিস্তানের দলীয় ৩২ রানে ৫ উইকেট পড়ার পর ক্রিজে এসেছিলেন পেস অলরাউন্ডার আজমতউল্লাহ ওমরজাই। এরপরও নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে যায় সফরকারীরা। তবে স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে ক্যারিয়ারের অভিষেক ফিফটি তুলে নিলেন এই অলরাউন্ডার। ৪৪তম ওভারে তাইজুল ইসলামের করা শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে ফিফটি করেন ওমরজাই। ইনিংসে ৬৭ বলে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন ডানহাতি এই ব্যাটার।
দলীয় ৬৮ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর জিয়া উর রহমান ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন। তবে সেই জুটির প্রতিরোধ ভেঙে দিলেন তাইজুল ইসলাম। জিয়াকে ৫ রানে বোল্ড করেন বাংলাদেশি স্পিনার। ৮৯ রানে ৮ উইকেট হারালো আফগানিস্তান।
আফগানদের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে নিজের অষ্টম ওভারে শরিফুল ইসলাম তার চতুর্থ শিকার করলেন। আফগানদের অভিষিক্ত আব্দুল রহমানকে তাইজুল ইসলামের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরান তিনি। ২০ বলে ৪ রান করেছেন আফগান ব্যাটার। এর আগে প্রথম স্পেলে তিন উইকেট নেন শরিফুল। ৬৮ রানে আফগানিস্তানের সাত উইকেট পড়লো।
ব্যাটিংয়ে বিপদে পড়া আফগানিস্তানকে টেনে তোলার চেষ্টা করছিলেন হাশমতউল্লাহ শহীদি। টানা তিন ওভারে একটি করে চার মেরে রানের চাকা সচল করার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু তাইজুল ইসলামের দ্বিতীয় ওভারে থামতে হলো আফগান অধিনায়ককে। তার স্টাম্প উপড়ে ফেলেন বাংলাদেশি স্পিনার তাইজুল। ৫৪ বলে চার চারে ২২ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরলেন হাশমতউল্লাহ। দলীয় ৫৩ রানে তাদের ষষ্ঠ উইকেট পেয়েছে বাংলাদেশ।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর মিশনে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে দারুণ সূচনা করেছে টাইগাররা। শরিফুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদের বোলিং তোপে শুরুতে মাত্র ১৫ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে আফগানরা। এরপর অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহীদি ও নাজিবুল্লাহ জাদরান দলের চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
তবে দলীয় ৩২ রানের মাথায় নাজিবুল্লাহকে ফিরিয়ে উইকেটের মিছিলে যোগ দিলেন সাকিব আল হাসানও। বাঁহাতি এই ব্যাটারকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে বিদায় করেন তিনি। আউটের আগে ২২ বলে ১০ রান করেন হার্ডহিটার এই ব্যাটার। এতে টপ অর্ডারের ৫ উইকেট নেই সফরকারীদের।
ইনিংসের নবম ওভারে নিজের তৃতীয় উইকেটের দেখা পেয়ে গেলেন শরিফুল ইসলাম। আফগান সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ নবিকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে বিদায় করেন তিনি। এই অলরাউন্ডার রিভিউ নিলেও আগের সিদ্ধান্ত বহাল থাকে। ফলে মাত্র ১ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন নবি। দলীয় ১৫ রানে চতুর্থ উইকেট তুলে নিলো বাংলাদেশ।
শরিফুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদের বোলিং জুটিতে আফগানিস্তানের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। তৃতীয় ওভারে শরিফুলের জোড়া আঘাতের পর উৎসবে মাতলেন তাসকিনও। ষষ্ঠ ওভারে বিধ্বংসী ব্যাটার রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ফেরালেন ডানহাতি এই পেসার। তার বাউন্সারে আফগান ওপেনার পেছনে মুশফিকুর রহিমের দারুণ ক্যাচে প্যাভিলিয়নে ফিরলেন। ২২ বলে ১ বাউন্ডারিতে মাত্র ৬ রান করেন গুরবাজ।
আগের ম্যাচে উদ্বোধনী জুটিতে ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫৬ রান করেছিল আফগানিস্তানের দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। এই দুই ওপেনার তাদের নিজ ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে বাংলাদেশকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। তবে আজ ইনিংসের শুরুতেই আফগান শিবিরে জোড়া আঘাত হেনেছেন একাদশে ফেরা পেসার শরীফুল ইসলাম।
ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে ইব্রাহিম জাদরানকে (১) উইকেটের পিছনে মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় করেছেন শরীফুল। এরপর একই ওভারের পঞ্চম বলে রহমত শাহকে একইভাবে সাজঘরে ফিরিয়েছেন বাঁহাতি এই পেসার। রহমত ৪ বল খেলে ফিরেছেন শূন্যহাতে। এর আগে প্রথম দুই ওভারে আঁটসাঁট বোলিং করেছেন তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম।
হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর লক্ষ্যে আজ একাদশে ৩টি পরিবর্তন এনেছে বাংলাদেশ। হাঁটুর চোটে পড়া পেসার এবাদত হোসেন একাদশে নেই। এ ছাড়া বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে হাসান মাহমুদ ও মোস্তাফিজুর রহমান। তাদের বদলে দলে সুযোগ পেয়েছেন তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও তাইজুল ইসলাম।
অন্যদিকে সিরিজ নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় আফগানিস্তান তাদের তারকা লেগ স্পিনার রশিদ খানকে বিশ্রাম দিয়েছে। এর আগে ঢাকায় একমাত্র টেস্টেও ছিলেন না রশিদ। এ ছাড়া প্রথম দুই ম্যাচ খেলা পেসার সেলিম সাফিও নেই আজ। তাদের জায়গায় দলে এসেছেন আব্দুল রহমান ও জিয়া আকবর। ডানহাতি পেসার রহমান ও বাঁহাতি স্পিনার জিয়া, দুজনেরই অভিষেক হচ্ছে আজ।
বাংলাদেশ একাদশ : লিটন দাস (অধিনায়ক), মোহাম্মদ নাঈম, নাজমুল হোসেন, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, তাওহিদ হৃদয়, আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, তাইজুল ইসলাম ও শরীফুল ইসলাম।
আফগানিস্তান একাদশ : রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, রহমত শাহ, হাশমতউল্লাহ শহীদি (অধিনায়ক), নাজিবুল্লা জাদরান, মোহাম্মদ নবি, জিয়া আকবর, মুজিব উর রহমান, ফজলহক ফারুকি, আজমতউল্লাহ ওমরজাই ও জিয়া আকবর।
চট্টগ্রামে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে টস জিতেছেন আগগানিস্তানের অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহীদি। তিনি প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে প্রথমে বোলিং করবে টাইগাররা। ১৭ মাস আগে চট্টগ্রামেই বাংলাদেশ একই প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার মিশনে নেমেছিল। এবার নিজেরা হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর মিশনে। যদিও বৃষ্টির কারণে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনাও আছে। ম্যাচটি মাঠে গড়াবে দুপুর দুইটায়।
সর্বশেষ ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার কাছে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল টাইগাররা। এবার ৯ বছর পর আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশের সামনে দাঁড়িয়েছে টাইগাররা। তবে এবার ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচ জিতে ধবলধোলাই এড়াতে চায় লিটন দাসের দল। চট্টগ্রামে আজ তৃতীয় ম্যাচটা বাংলাদেশ খেলছে সে মঞ্চে দাঁড়িয়েই। প্রথম দুই ম্যাচেই বড় ব্যবধানে হারে সিরিজ হার নিশ্চিত হয়ে গেছে।
আপনার মতামত লিখুন :