পলিয়ার ওয়াহিদ : কবিতার চাষা ও তার কবিতা


মুক্তির আলো প্রকাশের সময় : ২৩/০৫/২০২৩, ৭:৫৯ অপরাহ্ন
পলিয়ার ওয়াহিদ : কবিতার চাষা ও তার কবিতা

শব্দের পরে শব্দ ঠেসে দিলে কবিতা হয় কি? কবিতা হয় কি একটি কাঠামোর ভিতর চেনা শব্দের সারি সাজিয়ে দিলে? মনে হয়, হয় না। তবে কী হলে হয়? জানি না। তবে জানি, কোথাও একটা কিছু থাকতে হয়, সেই কিছুটার ব্যাখ্যা নেই, বিশ্লেষণ নেই, ছায়া নেই, ছবি নেই; কিন্তু বিশাল বিস্তৃত বলার আকাঙ্ক্ষা আছে, ইচ্ছা আছে, যা ব্যক্ত করা যায় না। কেবল নিশ্চুপে অনুভব করা যায়। হাসা যায়, কাঁদা যায়, বয়ে নিয়ে চলা যায় হাজার বছর বা তারও পর।

পলিয়ার ওয়াহিদের কবিতায় সেই ব্যাখ্যাহীন বলাটা স্পষ্ট, কাছে বসে দূরের ছবিটা দেখা যায়। ধরা যায় না, অথচ স্পর্শ করা যায় অনুভবের নরম পালকে। ধুপধুপ করে অনেক পথ পর্যন্ত হাঁটা যায় তার কবিতার ভাবনার ভেতর, ভাবতে ভাবতে। ভার কিন্তু নির্ভার বহন করে নিয়ে যাওয়া যায় যতদূর যেতে ইচ্ছা করে। বলায়, বৈশিষ্ট্যে, বক্তেব্যে তার বলাটা বক্র নয়, ব্যতিক্রম।

 তুমি ভেড়া হতে ভালোবাসো/ কুঁজো হয়ে বলো সংখ্যালঘু/ এই শব্দে আমার বড় আপত্তি গো সোনা/ এইভাবে রাজনীতি হয় না মাসিমা!’ (সংখ্যালঘু)। ‘শিশুদের চোখে কুয়াশার মতোন চশমা/ যেন অন্ধকার ভবিষ্যতের ইশারা!/ মোড়ে মোড়ে ওষুধের ডিসপেনস্যারি/ প্রায়ই অরোগী সুন্থতাকে ভেঙচি কাটে/ ডেনিস দুধের বিজ্ঞাপনে করপোরেট মা/ সন্তানের শারীকি মেধা নিয়ে প্রশংসা করে!’ (কমরেড)।

কবিতাকে আত্মপ্রচারের মাধ্যম নয়, রাজনীতির ফায়দা লুটার নয়, রমণীয় সময়-সঙ্গেরও নয়, কবিতাকে সময় অঙ্কনের হাতিয়ার, দুঃসময়ের মাইক্রোফোন করে প্রতিবাদের বাণীরূপে রূপাঙ্কিত হয় তার কবিতা। কালের মিম্বরে দাঁড়িয়ে পলিয়ার উচ্চারণ করেন সত্য, সাহস আর সাম্যের বিধানে বিধৃত বলিয়ান বাক্য। তাকে কুচচালে অবহেলা করা যায়, অবজ্ঞা করা যায়, অবাধ্য বলে বাল্কহেডের বাইরে ফেলে দেওয়া যায় তবে তাকে ভেদ করা যায় না।

আমি সূর্যমুখী ফুল/ কারো কথায় পিছন ফিরে ক্যান বা দেখবো ভুল/ ভুলের পথে যারাই থাকুক ধুতরো ফুলের দেশে/ দেশপ্রেমে থাকবো কেবল, আমি ডুবে ভেসে! গভীর নদীর ইলিশ হলাম উজানে সঞ্চার/ দ্যাখো-পথে পথে ছড়িয়েছে ছায়া অন্ধাকার! (আমি সূর্যমুখী ফুল)।

তরুণ তরুণ্যে ভরপুর তার কবিতার প্রতিটি লাইনে সাদা ঘোড়ার হ্রেষা টনটন। গোলাপের বাগান বর্ণীল। চিন্তার গভীর গহ্বর উপস্থিত। পড়তে পড়তে সময় কাটালে কবিতা যেমন চিরকালের কানা আদলিতে পরিণত হয় তেমনি পলিয়ারকে পড়তে বসে সময়-কাটিয়ে গেলে কানা আদলি জ্ঞান হতে পারে, মনে হতে পারে কী কবিতা! সময়কে উপলব্ধি করতে চাইলে তার কবিতাগুলো দেখাবে অদেখার অভ্যন্তরে এক বিরাট দেখার আবহ, যা চোখের চারপাশ দিয়ে রোজ চলে গেলেও আমরা অন্ধ-আলোকের ছুতায় দেখতে পাই না। চাই না। কবিতাও যে চোখ খুলে দিতে পারে, টুস করে ফাটিয়ে দিতে পারে চোখের চশমা, যা তাকে না পড়লে বোঝা দায়। দায় এবং দায়িত্ব থেকে সময়ের দাবি শুনতে চাইলে, বুঝতে চাইলে পলিয়ারের কবিতা সঙ্গী হয় নিঃসন্দেহে। সরল, সহজ করে বয়ে যাওয়া পলিয়ারের কবিতা যেন কুঁজো হয়ে হাঁটা লোকটিকে বলে, সোজা হয়ে হাঁটো, সোজা হয়ে হাঁটাটা তোমার চিরদিনের অধিকার। অনিবার।

 

লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক jobaiermilon88@yahoo.com