বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক আন্দোলনের এখন কী হবে?


মুক্তির আলো প্রকাশের সময় : ২৭/০৫/২০২৩, ১২:২৯ অপরাহ্ন
বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক আন্দোলনের এখন কী হবে?

বাংলাদেশে নির্বাচন প্রতিহত করা কিংবা সহিংসতার সাম্প্রতিক ইতিহাস বলে, ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রায় তিন বছর ধরে অব্যাহত সহিংসতায় জড়ায় বিএনপি-জামায়াত জোট। তাদের লাগাতার অবরোধ কর্মসূচিতে পেট্রোল বোমায় নিহত হন প্রায় সাড়ে তিনশ’ মানুষ। আহত হন কয়েক হাজার।

রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের নানা প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়ায় আন্দোলনের নামে জ্বালানো আগুনের লেলিহান শিখা। সেই সময় আগুন-সন্ত্রাসের শিকার মানুষের আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠানটির বার্ন ইউনিট উপচে পড়ে রাজনীতির আগুনে পোড়া নানা বয়সের মানুষে।

 শুধু যানবাহন নয়, পুলিশ ফাঁড়ি থেকে শুরু করে নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত স্কুল-কলেজও আগুনে পুড়িয়ে দেয় তারা। আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় নির্বাচনী কাজে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদেরও।
 
এসবের মাঝেই সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং গণতন্ত্র সচল রাখতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তবে নির্বাচনের পরেও অব্যাহত থাকে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তির আগুন-সন্ত্রাস। রাজধানী ঢাকাকে পুরো দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার এই অপপ্রয়াসে জীবিকা হারান বহু মানুষ। চাপ বাড়ে অর্থনীতির ওপর। এক পর্যায়ে জীবন না জীবিকা- এমন প্রশ্নের মুখে রুখে দাঁড়ান সাধারণ মানুষ। অবরোধের মধ্যেই পথে নামেন তারা। যোগ দেন কাজে। ঘুরতে থাকে যানবহানের চাকা। ব্যর্থ আন্দোলনে রাজনীতির অর্জনের খাতায় কী যুক্ত হয়েছে সেই প্রশ্ন অমীমাংসিত থাকলেও, খুনে-আগুনে খেলার এই সহিংসতা দেশের মানুষকে দিয়েছে তীব্র ভীতি।
 
নির্বাচন প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে সহিংস আগুন-সন্ত্রাস করে ২০১৪ সালে সাধারণ মানুষের কছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। কিন্তু ফল হয় অত্যন্ত খারাপ। মাত্র ছয়টি আসন পায় দলটি। এরপর থেকে আবারও আন্দোলনের মাঠে তারা। কিন্তু এই দফায় বড় ধরনের সহিংসতা না করলেও নানা রকম উসকানিমূলক অরাজনৈতিক বক্তব্য অব্যাহত রেখেছেন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
 
এরই অংশ হিসেবে গত ১৯ মে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার শিবপুর হাইস্কুল মাঠে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশে রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘কবরস্থানে’ পাঠানোর হুমকি দেন।

এমনকি দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে লাগাতার বলে চলেছেন নির্বাচনকালে তাদের দাবিমতো সরকার না হলে নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।
 
সম্প্রতি দলীয় এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের উদ্দেশে বলেন, রাজপথে ফয়সালার মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের বিদায় করা হবে। এরপর নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এ দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন করা হবে।
 
আরেক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।
 
এর মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠূ ও শান্তিপূর্ণ করার লক্ষ্যে সরকারের চেষ্টাকে সহায়তা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে নতুন ভিসা নীতি। দেশটির ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের কয়েকটি ধারা অনুযায়ী ঘোষিত ভিসা নীতি অনুযায়ী যারাই সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করবে তারাই এর আওতায় পড়বে।

বাংলাদেশ সময় বুধবার (২৪ মে) রাতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক টুইটে এ কথা জানান। এ বিষয়ে বিস্তারিত বিবৃতি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর তাদের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের নিয়মিত ব্রিফিংয়েও ভিসা নীতির বিষয়টি ওঠে আসে।
 
এর কয়েকঘণ্টা পর বাংলাদেশের একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দলের জন্যই এটি সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, যদি বিরোধী রাজনৈতিক দলের কেউ সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েন, বা ভোটারদের ভয়ভীতি দেখান তিনিও যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাবেন না।
 
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থানের পর প্রশ্ন উঠেছে, নির্বাচনে অংশ না নেয়ার হুমকি দেয়া, মানুষকে ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া কিংবা নিরুৎসাহিত করা বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি এখন কী বলবে? কারণ এ ধরনের কর্মকাণ্ড করলে ভিসা না পাওয়ার চক্করে পড়তে পারেন তারাও।