আর কীসের অপেক্ষায় ‘ক্যাপ্টেন কুল’


মুক্তির আলো প্রকাশের সময় : ৩০/০৫/২০২৩, ৪:২৮ অপরাহ্ন
আর কীসের অপেক্ষায় ‘ক্যাপ্টেন কুল’

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় টুর্নামেন্টের ১৬তম আসরের হাইভোল্টেজ ফাইনালে গুজরাট টাইটানসকে হারিয়ে পঞ্চমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে চেন্নাই সুপার কিংস। জাদেজার জাদুর ছোঁয়ায় শেষ বলে বাঁধভাঙা উল্লাসে মাতে সিএসকের ডাগ-আউট।

উচ্ছ্বাসের কোনো কমতি ছিল না স্টেডিয়ামে ফ্যানদের মধ্যেও। তবে এত আনন্দ, উৎসব, আবেগের মধ্যেও একটা প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খাচ্ছিল, এবার কি বিদায় বলছেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’ মহেন্দ্র সিং ধোনি!

সময়টা ২০০৮, প্রথমবারের মতো চেন্নাইয়ের হলুদ জামা গায়ে জড়ান এম এস ধোনি। পরের অধ্যায়গুলো জীবন্ত এক ইতিহাস। হলুদের ছায়াতলে অনেকেই পাড়ি জমিয়েছেন। এরপর ক্রমেই ছেড়েছেন সিএসকের শিবির। তবে কালের বিবর্তনে একজনই রয়ে গেছেন, তিনি ‘ক্যাপ্টেন কুল’। সিএসকের যত সাফল্য, তার পুরোটা জুড়েই নিজের নামফলক এঁকেছেন সাবেক এ ভারতীয় অধিনায়ক।

আইপিএলের প্রথম আসরেই দলকে ফাইনালে তুলেছিলেন ২৬ বছর বয়সী টগবগে যুবক। তবে সেই যাত্রায় ব্যাট হাতে দুই ছক্কা ও এক চারে ২৯ রানের ক্যামিও ইনিংসেও দলকে শিরোপার খেতাব এনে দিতে পারেনি। তবে ১৫ বছর পর ৪১ বছরের বুড়ো সেই একই মঞ্চে। অনেকের ধারণা ছিল, এটিই বোধ হয়, এ উইকেট-কিপার ব্যাটারের আইপিএলে শেষ ম্যাচ। ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যেও সেই আশঙ্কাই জমে ছিল। তবে না, ভক্ত-সমর্থকদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে আরও একবার আইপিএল মঞ্চ মাতানোর আভাস দিলেন ‘মাহি’।

এর আগে, ফাইনালে নেমেই রেকর্ড বইয়ে নাম লেখান ধোনি। আইপিএল ইতিহাসে ২৫০তম ম্যাচ খেলেছেন মাহি, তিনি ছাড়া কেউ-ই এতো ম্যাচ খেলতে পারেননি।

এ নিয়ে ১১ বার ফাইনালে খেললেন এ ব্যাটার, এর মধ্যে ১০ বারই চেন্নাইয়ের হয়ে, পুনের হয়েও ফাইনাল খেলেছিলেন একবার। আর হলুদ শিবিরের হয়ে মুম্বাইয়ের সঙ্গে রেকর্ড পঞ্চম শিরোপায় জড়ালো তার নাম। এক কথায়, আইপিএল ফাইনাল মানেই যেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’।

ধোনির ক্যারিয়ারের পুরোটাই মোড়ানো অর্জনের পালকে। শূন্য থেকে পৌঁছেছেন সাফল্যের সর্বোচ্চ শিখরে। জাতীয় দল, ক্লাব, ব্যক্তিগত অর্জনে কোথায় নেই তিনি। গ্যালারিজুড়ে ফ্ল্যাশ লাইটের আলো আঁধারির খেলায় দেখছেন একের পর আইপিএল শিরোপার উৎসব। নিজেও মেতেছেন এ আনন্দ-উল্লাসে। এখন ভক্ত-সমর্থকদের ভালোবাসায় কানায় কানায় সিক্ত ৪১ বছর বয়সী এ ক্রিকেটার। তাই স্বভাব-ই প্রশ্ন জাগে, এখনই অবসরের মাহেন্দ্রক্ষণের প্রহর না গুনলে, আর কীসের অপেক্ষায় ‘ক্যাপ্টেন কুল’।

তবে ধোনি যতটা ভারতীয় ক্রিকেটের, প্রায় ততটাই চেন্নাইয়ের। প্রশ্নতীতভাবেই গড়ে তুলেছেন সিএসকের একেকটা খেলোয়াড়। রবীন্দ্র জাদেজা, সুরেশ রায়নারাই এর বাস্তব উদাহরণ। তবে শঙ্কাও জাগে, কেউ কি ধোনিবিহীন আইপিএল কল্পনাও করতে পারছেন? বেনামে উড়ো চিঠিতেও ক্যাপ্টেন কুল থাকবেন কিনা? যে কারণে পুরস্কার বিতরণের সময় তার (ধোনি) অবসরের প্রশ্নটা সরাসরি করতে গিয়ে কিছুটা ইতস্তত বোধই করলেন হর্ষ ভোগলে।

জবাবে সোজাসাপ্টা উত্তরই দিলেন ক্যাপ্টেন কুল। তার ভাষ্যমতে, একটা উত্তর খুঁজছ, তাই তো। আমার অবসর নিয়ে। যদি বাস্তব দেখি, এটাই অবসর নেওয়ার সেরা সময়। এখান থেকে ক্রিকেটকে পাকাপাকিভাবে বিদায় জানাতেই পারি।

ধোনির ভাষায়, কিন্তু গত কয়েক মাস জুড়ে গোটা দেশ জুড়ে যে ভালোবাসা পেয়েছি, তা ভোলার নয়। হৃদয়ের খুব কাছের। তবে আমার কাছে এ সুখের থেকে কঠিন চ্যালেঞ্জ হল আগামী ৯ মাস পরিশ্রম করে আরও একটা আইপিএল খেলার চেষ্টা করা। এখনও ৬ থেকে ৭ মাস রয়েছে, আমার কাছে ভাবার জন্য। শরীর জন্য এটা সহজ হবে না জেনেও, আমার তরফ থেকে এটাই সমর্থকদের ভালোবাসার উপহার, প্রতিদান।

সিএসকে অধিনায়ক আরও যোগ করলেন, জেতার পর ডাগ-আউট যে কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে বসেছিলাম, সেই সময় বুঝতে পেরেছিলাম আমাকে এটা উপভোগ করতে হবে।

তাই এখন দেখার বিষয়, আর কতটা সময় অপেক্ষায় রেখে ভক্ত-সমর্থকদের ‘অবসর’ প্রহরের সাক্ষাতে মাতান ‘ক্যাপ্টেন কুল’।