শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘মোশা’ বাহিনীর প্রধান গ্রেফতার


মুক্তির আলো প্রকাশের সময় : ০১/০৬/২০২৩, ২:৪২ অপরাহ্ন
শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘মোশা’ বাহিনীর প্রধান গ্রেফতার

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে স্থানীয় জনগণ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা, গুলিবর্ষণ ঘটনার মূলহোতা এবং হত্যা, ধর্ষণ, হত্যাচেষ্টা, মাদক, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে ৪০টির অধিক মামলার আসামি ‘মোশা’ বাহিনীর প্রধান শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া ওরফে মোশা (৪৭) ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী দেলোয়ার হোসেনকে (৫২) কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী থেকে গ্রেফতার করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

বৃহস্পতিবার (১ জুন) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারের র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

খন্দকার আল মঈন বলেন, র‍্যাব গোয়েন্দা শাখার সহযোগিতায় র‍্যাব-১১ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এসময় উদ্ধার করা হয় বিদেশি পিস্তল ও গোলাবারুদ। গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

মঈন বলেন, নারায়ণগঞ্জ ও রূপগঞ্জে বিভিন্ন রকম অপরাধের সঙ্গে জড়িত এই মোশা। তিনি অর্থের বিনিময়ে এসব কাজ করেন। নিজেই এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেন। ৭০ থেকে ৮০ জনের একটি দল লিড করেন এই মোশা। ২০ বছর বয়স থেকেই তিনি অপরাধমূলক কাজে জড়িত হন। দেশি-বিদেশি অস্ত্রের মাধ্যমে মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে নানারকম অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে আসছিলেন।

তিনি বলেন, ২৫ মে (বৃহস্পতিবার) নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে স্থানীয় জনগণ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা, গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ ২০-২৫ জন গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় রূপগঞ্জ থানা পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে। ঘটনাটি বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। এ প্রেক্ষিতে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র‍্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।


মঈন বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় র‍্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখার সহায়তায়, র‍্যাব-১১ ও র‍্যাব-১৩ এর যৌথ অভিযান পরিচালিত হয়। বুধবার (৩১ মে) কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ এলাকার মোশা বাহিনীর প্রধান মূলহোতা ও শীর্ষ সন্ত্রাসী হাজি মোতালেব ভূঁইয়ার ছেলে মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া ওরফে মোশা ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মৃত ছালেম মিয়ার ছেলে দেলোয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃতদের তথ্যের ভিত্তিতে ভোরে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের নাওড়া এলাকা থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগজিন ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য প্রদান করেন।

উল্লেখ্য, গত ২৫ মে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার নাওড়া এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সহিংসতার সৃষ্টি হলে মোশা বাহিনীর ৭০-৮০ জন সন্ত্রাসী এলাকায় শোডাউন, লোকজনকে মারধর এবং গুলিবর্ষণ করে। স্থানীয় লোকজন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এ ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করে। পরবর্তীতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে মোশা বাহিনীর সন্ত্রাসীরা তাদেরকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেনকে গ্রেফতার করলে মোশা বাহিনীর সন্ত্রাসীরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর চড়াও হয়ে অতর্কিত গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ৫/৬ জন পুলিশ সদস্যকে আহত করে মোশারফকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

গ্রেফতারকৃত মোশারফ স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য সে ‘মোশা বাহিনী’ নামে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে। তারা দীর্ঘদিন যাবত রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, হত্যা, হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, অর্থের বিনিময়ে ভূমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। পরবর্তীতে আত্মগোপনে থাকাকালীন সময় তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, হত্যা, হত্যাচেষ্টা, বিস্ফোরক দ্রব্য, চাঁদাবাজি, মাদক ও প্রতারণাসহ ৪০টির অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায় এবং বিভিন্ন মেয়াদে সে একাধিকবার কারাভোগ করে।

গ্রেফতারকৃত দেলোয়ার হোসেন স্থানীয় একটি বিদ্যালয় থেকে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে। সে গ্রেফতারকৃত মোশারফের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, চাঁদাবাজি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। তার বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ থানায় বিভিন্ন অপরাধে ৫টির অধিক মামলা রয়েছে বলে জানা যায় এবং সে বিভিন্ন মেয়াদে একাধিকবার কারাভোগ করেছে। উক্ত ঘটনার পর সে মোশারফের সঙ্গে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী এলাকায় আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে আত্মগোপনে থাকাকালীন সময় র‍্যাব তাকে গ্রেফতার করে।